কসর, মুসাফিরের নামাজ
কসর/ মুসাফিরের নামাজ
===================================
===================================
>>কসর আরবি শব্দ আর এর অর্থ হলো কম করা, কমানো। ইসলামী শরিয়তে কোনো ব্যক্তি যদি ৪৮ মাইল বা তারও বেশি দূরত্বের সফরে বাড়ি থেকে বের হয় তাহলে সে মুসাফির। আর সে যদি সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তবে সে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বে।
>>যেমন- জোহর, আসর, এশা- এটাই হলো সংক্ষেপ করা বা কসর নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই সংক্ষেপ করার মধ্যেই অধিক কল্যাণ রেখেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই।’ (সূরা নিসা-১০)।
>>এ প্রসঙ্গে হজরত আনাস রা: বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে মদিনা থেকে মক্কাভিমুখে রওনা হয়েছিলাম। তিনি ফরজ নামাজ দুই রাকাত আদায় করলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা মদিনায় ফিরে এলাম। এ সময় হজরত আনাস রা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনারা কি সেখানে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, আমরা ১০ দিন অবস্থান করেছিলাম। (বুখারি)। মুসলিম মিল্লাতের জন্য নামাজের কসর মহান আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। স্রষ্টার দয়া, অনুগ্রহ।
>>কেবল চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ যেমন- জোহর, আসর ও এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়বেন।
২. মুসাফির ইমামত করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দেবে যে, সে মুসাফির এবং দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে এবং মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে নেবেন।
৩. মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন তাহলে ইমামের অনুসরণে তিনিও চার রাকাত পড়বেন।
৪. মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে।
৫. প্রত্যেক নামাজের নিয়ত করতে হবে, কোন ওয়াক্তের কসর পড়বেন।
৬. মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম।
৭. ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং আগেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না, এভাবে ১৫ দিন বা তার বেশি দিন থাকলেও কসর পড়বেন।
৮. দুই রাকাত, তিন রাকাত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
৯. কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তিনি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবেন না এবং তার জন্য কসরের হুকুমও প্রযোজ্য হবে না।
৯. কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তিনি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবেন না এবং তার জন্য কসরের হুকুমও প্রযোজ্য হবে না।
>>কসর নামাজের ফজিলত : কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ করেই সহজ বিধান দিয়েছেন। ইসলাম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মুক্তির জন্য। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও ছাড় দিয়েছে।
>>মূলত এই কসর নামাজের বিধানের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় শিক্ষা রয়েছে, তাহলো কোনো অবস্থায়ই ফরজ ইবাদত অলসতার কারণে বা সমস্যা থাকার কারণে পুরোপুরি ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
>>কসরের নামাজের ফজিলতের কথা বলে রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সফরে নামাজকে কসর করো-এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান’ (বায়হাকি)।
>>ইমামে আজম আবু হানিফা রহ: বলেন, ‘সফরে চার রাকাত নামাজকে দুই রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ দুই রাকাতের বিনিময়ে চার রাকাতের প্রতিদান তো দেবেনই, সেই সাথে মুসাফির অবস্থায় নামাজ পড়ার সওয়াব অনেক বেশি। তাই সফরে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে না।’
>>মানুষ আল্লাহ তায়ালার প্রিয় সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকাই তার একান্ত কর্তব্য। সেহেতু মানুষের তথা মুসলিম জাতির দায়িত্ব হলো যেখানে যে অবস্থাতেই সে থাকুক না কেন, আল্লাহ তায়ালার এবাদতে ব্যাপৃত থাকতে হবে।
===================================
===================================
No comments