ধাপে ধাপে পুরুষের নামাজ শিক্ষা
ধাপে ধাপে পুরুষের নামাজ শিক্ষা
-----------------------------------------------------
মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন বান্দা'র জন্য ইবাদতকে সহজ করে দিয়েছেন। জ্বীন এবং মানব জাতিকে কেবলমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করলেও দৈনিক ফরজ করেছেন মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তার পরেও সময় ও সুযোগের অভাবে আমাদের অনেকেরই সহীহ নিয়মে সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ের নিয়মসমূহ শেখা হয় না। তাই আমরা অ্যাপলিকেশনের এই অংশে ধাপে ধাপে নামাজের বিষয়গুলো সহজভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।
----------------------
এই অংশে নামাজের ধাপগুলো কীভাবে আদায় করতে হবে, সেই দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় সূরা ও অন্যান্য দোয়া ও তাসবীহ-এর জন্য সম্পূর্ণ অ্যাপলিকেশনের সকল অধ্যায় পাঠ করা জরুরি। আমরা আশা করছি যে ব্যবহারকারী আমাদের অ্যাপলিকেশনের সমগ্র অংশই পুনঃপুন পাঠের মাধ্যমে সহীহ ও সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবে ইনশা-আল্লাহ।
===================================
___________________________________
নামাজে দাঁড়ানোর নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) নামাজে সর্বদা কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। এদিক-ওদিক তাঁকাবে না।
(*) দাঁড়ানো অবস্থায় নজর সিজদার স্থানের দিকে রাখতে হবে। মাথা কিঞ্চিত ঝুঁকিয়ে রাখতে হবে কিন্তু থুতনি যেন বুকের সাথে লেগে না যায়, ইহা মাকরূহ। নামাজের নিয়্যত বাঁধার পূর্ব পর্যন্ত দুই হাত শরীরের দুই পার্শ্বে ছেড়ে রাখবে।
(*) পা এবং পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী রাখতে হবে। দুই পা দুই দিকে করে রাখা যাবে না, বরং দুই পা সোজা সামনের দিকে কিবলা বরাবর রেখে আদবের সাথে দাঁড়াতে হবে।
(*) দুই পায়ের মাঝখানে অন্তত চার আঙুল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। পায়ের সামনে ও পিছনের ফাঁকের পরিমাণ সমান হবে, অর্থাৎ পা সোজা রাখতে হবে।
(*) জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় কাতার সোজা রাখা জরুরি। কাতার সোজা রাখার জন্য প্রত্যেক মুসল্লী তাদের পায়ের গোড়ালির শেষ মাথা এক বরাবরে রেখে দাঁড়াবে। সামনে পিছনে আঁকাবাঁকা অবস্থায় দাঁড়াবে না।
(*) জামায়াতে নামাজ আদায় করার সময় মুসল্লীগণ নিজেদের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রাখবে না। বরং যথাসম্ভব কাছাকাছি গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াবে।
(*) পায়জামা বা লুঙ্গি অর্থাৎ পরিধেয় বস্ত্র অবশ্যই টাখনুর উপরে রাখবে। টাখনু ঢেকে কাপড় পরিধান করা পুরুষের জন্য গোনাহের বিষয় এবং এই অবস্থায় নামাজ সহীহ হবে না।
যে ধরণের পোশাক পরিধান করে জনসম্মুখে যাওয়া লজ্জাজনক বোধ হয়, সে ধরণের কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়া মাকরূহ।
(*) জামার আস্তিন লম্বা হওয়া উত্তম। আস্তিন গুটিয়ে নামাজ আদায় করা আদবের খেলাফ এবং মাকরূহ।
___________________________________
তাকবীরে তাহরিমা বা "আল্লাহু আকবার" বলে নামাজ শুরু করার নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে নামাজের নিয়্যত করবে। নিয়্যত মুখে মুখে উচ্চারণ জরুরি নয়, তবে কোন ওয়াক্তের কোন নামাজ পড়বে, তার ধ্যান মনে মনে থাকা ফরয।
(+) তাকবীর বলার সময় দুই হাত কান বরাবর এমনভাবে উঠাতে হবে যেন উভয় হাতের তালু কিবলামুখী হয়। আঙুলগুলির মাথা কিবলামুখী হবে এবং স্বাভাবিক ফাঁক থাকবে। অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের সাথে একেবারে মিলে যাবে বা বরাবর হবে এবং বাকি আঙ্গুলগুলো উপরের দিকে থাকবে।
(*) কান থেকে হাত নামিয়ে সোজা হাত বেঁধে ফেলবে। নিচে ছেড়ে দিবে না বা পিছন দিকে ঝাড়া দিবে না।
(*) তাকবীর বলা শেষে দুই হাত বাঁধতে হবে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা নিচের ছবির মতো করে বাম হাতের কবজি ধরবে। অতঃপর ডান হাতের মাঝখানের তিন আঙুল বাম হাতের বাহুর উপরে সোজাভাবে বিছিয়ে রাখবে।
(*) উভয়হাত নাভির কিছুটা নিচে পেটের উপর চেপে ধরবে এবং উপরোক্ত নিয়মে হাত বাঁধবে।
__________________________________
নামাজে কিরাত পাঠ করার নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) নামাজে নিয়্যত বাঁধার পরে প্রথম রাকাতে প্রথমে মনে মনে সানা পাঠ করবে। অতঃপর সুরা ফাতেহা পাঠ করবে। সূরা ফাতেহার পরে অন্য একটি সুরা মিলাবে। নারী লোক সর্বদা মনে মনে কেরাত পাঠ করবে, আর পুরুষ লোক ফজর, মাগরিব ও এশার ওয়াক্তে ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে উচ্চস্বরে কেরাত পাঠ করবে। তবে একাকী নামাজ পড়লে কেরাত মনে মনে পাঠ করার অনুমতি আছে। যোহর, আসর, মাগরিব এবং এশার ফরজ নামাজের শুধুমাত্র প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে অন্য একটি সুরা পাঠ করতে হবে। ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা মনে মনে পাঠ করবে। তবে ফরজ ব্যতীত অপর সমস্ত নামাজে সকল রাকাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা (অথবা সুরার কিছু অংশ) পাঠ করতে হবে।
(+) আদবের সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হবে। দুই পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। বিনা কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করবে না। মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ধারণ করবে এবং নামাজে পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করবে।
(*) হাই তোলা বা হাঁচি-কাশি থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে। নিতান্তই অপারগ হলে এসমস্ত জরুরতের সময় বাম হাত পেটের উপর বাঁধা রেখে ডান হাত তুলে ডান হাতের পেট দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিবে। এখানে উল্লেখ্য যে, নামাজ ব্যতীত অন্যান্য অবস্থায় হাই তোলা বা হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় বাম হাতের পেট দিয়ে মুখ ঢাকবে।
(*) দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সর্বদা সিজদার দিকে রাখবে। এদিক-ওদিক তাঁকানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে।
___________________________________
রুকু করার নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) সুরা কেরাত পাঠ সম্পন্ন হলে "আল্লাহু আকবার" তাকবীর বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুর সময় শরীরের উপরের অংশকে এমনভাবে সামনে ঝুঁকাতে হবে যাতে মাথা, পিঠ ও কোমর এক বরাবরে থাকে।
(*) দৃষ্টি দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে রাখবে। মাথা এতো বেশি ঝুকাবে না যাতে থুতনি বুকের সাথে লেগে যায়। মাথা, পিঠ ও কোমর এক বরাবরে সোজা রাখবে।
(*) রুকুর সময় হাঁটু ভাংবে না। দুই পা সোজা রাখবে।
(*) ডান হাত দিয়ে ডান হাঁটু ও বাম হাত দিয়ে বাম হাঁটু শক্তভাবে ধরবে। হাতের আঙুলগুলোর মাঝে কিছুটা ফাঁক থাকবে।
(*) দুই হাত ও বাহু সোজা রাখবে। কুনুই বাঁকা করবে না।
(*) রুকু থেকে ধীরে সুস্থে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। দুই হাত শরীরের দুই দিকে থাকবে। সিজদায় যাওয়ার আগে শরীর সম্পূর্ণ সোজা করে দণ্ডায়মান হওয়া জরুরী। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি সিজদাহ করা অত্যন্ত অপছন্দ করতেন।
___________________________________
সিজদাহ করার নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে এমনভাবে নিচু হবে যেন মাথা ও সীনা সামনে ঝুঁকে না পড়ে। হাঁটু মাটি স্পর্শ করার পরে সীনা ও মাথা সামনের দিকে অগ্রসর হবে।
(+) হাঁটু জমিন স্পর্শ করার আগে শরীরের উপরের অংশ সামনে ঝুঁকাবে না।
(+) হাঁটুর উপরে হাত স্থাপন করতে পারে, কিন্তু হাতের দ্বারা হাঁটুরে শরীরের ভর দিবে না। অন্যথায় হাঁটু ভাঁজ করার সময় শরীর সামনে ঝুঁকে পড়তে পারে।
(*) জমিনে হাঁটু স্থাপন করবার পরে শরীর সামনে ঝুঁকাবে। প্রথমে দুই হাত, তারপরে নাক এবং সর্বশেষে কপাল জমিন স্পর্শ করাবে।
নাক সর্বদা জমিনে ঠেকিয়ে রাখবে। সিজদাহর মাঝে নাক মাটি থেকে তুলে ফেলা আদবের বরখেলাপ। সিজদাহর সময় চোখের নজর সর্বদা নাকের দিকে রাখবে।
(*) সিজদাহর সময় মাথা দুই হাতের মাঝে এমনভাবে রাখবে, যাতে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কান বরাবরে থাকে। দুই হাতের মাঝে চেহারা পরিমাণ জায়গা ফাঁকা থাকবে, এর অধিক নয়।
(*) সিজদাহের সময় হাতের আঙুলগুলো মিলিয়ে রাখবে। হাতের আঙুলের মধ্যে কোন ফাঁক রাখবে না।
(*) সিজদাহ অবস্থায় দুই পায়ের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থার ন্যায় জায়গা ফাঁক রাখবে। পায়ের আঙুলগুলোকে মুড়িয়ে কিবলামুখী করে রাখবে।
(*) হাতের কুনুই জমিনে বিছিয়ে রাখবে না বরং উঁচু করে রাখবে।
(*) উভয় বাহু বগল থেকে পৃথক রাখবে। বাহু বগলের সাথে মিশিয়ে রাখবে না।
(*) কুনুইকে এমনভাবে দুই দিকে ছড়িয়ে দিবে না, যাতে পাশের মসল্লীর সমস্যা হয়। বাহুকে বগল থেকে পৃথক করে পাশের মুসল্লীর সমস্যা সৃষ্টি না করে সামাঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে রাখবে।
(*) পেট ও রান আলাদা আলাদা রাখবে। রানকে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে না।
(*) উভয় পা এমনভাবে খাড়া রাখবে যেন গোড়ালি উঁচু থাকে। পায়ের আঙুল মুড়িয়ে কিবলামুখী রাখবে। পা মাটি থেকে তুলে ফেলবে না। তিন তসবীহ পরিমাণ সময় পা মাটিতে স্পর্শ করে না থাকলে সিজদাহ আদায় হবে না।
(*) দুই সিজদাহের মাঝখানে ধীর-স্থির ভাবে সোজা হয়ে বসবে। অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় যাবে। প্রথম সিজদাহ থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে না।
___________________________________
নামাজে বৈঠকের নিয়ম
-----------------------------------------------------
(*) নামাজে দ্বিতীয় রাকাতের পরে এবং শেষ রাকাতে বৈঠক করতে হয়। দ্বিতীয় রাকাতের পরে বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পাঠ করতে হয়। অপরদিকে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করতে হয়।
(+) বৈঠকের সময় বাম পা মাটিতে বিছিয়ে তার উপরে বসবে। ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান পায়ের আঙুল মুড়িয়ে কিবলামুখী করে রাখবে।
(*) উভয় হাত দুই রানের উপরে হাঁটুর সামনে রাখবে। হাতের আঙুল সামনের দিকে ঝুলিয়ে দিবে না, বরং হাঁটুর বরাবরে ভিতরেই রাখবে।
(*) তাশাহুদ পাঠ করার সময়ে "আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু" বলার সময়ে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে ইশারা করতে হবে। "আশহাদু" বলার সময়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যম আঙুলের মাথা একত্র করে চিত্রের ন্যায় গোল করতে হবে।
"লা ইলাহা" বলার সময় সময় তর্জনি উঁচু করে ইশারা করতে হবে। তর্জনী এই পরিমাণ উঁচু করবে যেন তার অগ্রভাগ কিবলামুখি হয়। এর অধিক উঁচু করা অনুচিত।
"ইল্লাল্লাহু" বলতে বলতে তর্জনী নামিয়ে ফেলবে। তবে ডান হাতের আঙুলগুলোকে আর সোজা না করে বৈঠকের বাকী সময় গুটিয়ে রাখবে।
(*) নামাজের শেষ বৈঠক তাশাহুদ, দরূদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সবশেষে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে সমাপ্ত করবে। প্রথমে ডান দিকে ও পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে। মাথা এতোটুকু ঘুরাবে যারে পিছনের কাতারের ব্যক্তি চোয়াল দেখতে পায়। সালাম ফেরানোর সময় নিজের কাঁধের উপরে নজর সীমাবদ্ধ রাখবে।
===================================
.........................
No comments